
Majharul Islam
কবি ও সাহিত্যিক
4.0
Story
মানবকুল চলতে-ফিরতে মনের অজান্তে অনেক ভুল করে বসেন। তাঁরা ওয়াকিবহাল নন-যে হর-হামেশা মুখ ফসকে কতক অরুচিকর অবাঞ্চিত কথা বলে-থাকেন! ঘড়ি দোকানিরা ইলেকট্রনিক্স ঘড়ি বিক্রিকালে ক্রেতাকে জ্ঞান-গর্ব উপদেশ দিয়ে বলেন, টিপাটিপি করবেন না? টিপাটিপি করলে ইহা নষ্ট হয়ে যাবে। পাঠক একটু ভাবুন-তো? এই-যে টিপাটিপি শব্দটি কতটুকু শালীন বা রুচিশীল? বর্তমান-কালে মোবাইল আসায় ইহা রিচার্জ করতে হয়, টাকা বিকাশ করতে হয়। কল দিয়ে কথা বলতে হয়। মোবাইল যেন প্রত্যেক মানুষের জীবনে অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল রিচার্জ বা টাকা বিকাশের পর প্রায় সবাই অকপটে বলেন, টাকাটা ঢুকেছে? অনেক বাবা মেয়ের কাছে ফোন করে জানতে চায়, টাকাটা ঢু-- কিনা? কল ঢুকছে কিনা! পাঠক ফের ভাবুন-তো, ঢুকেছে কথাটি কতটুকু নীচু মানের? বা শ্লীল-অশ্লীল? বহুদিন আগে আসাদ মার্কেটে গিয়েছিলাম কিছু কিনতে। পাশের দোকানে ক'জন নারী গ্রাহক ছিল। অপর পাশের দোকানি পঞ্চাশোর্ধ হবে বয়স। তিনি নির্লজ্জের মতো সবারে শুনিয়ে জাতীয় সংগীতের প্রথম চরণ-আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, বারবার গাইছেন! বুঝতে আর বাকি নেই, তিনি দেশ-প্রেমে নয়, বিকৃত মস্তিষ্কের বহিঃ প্রকাশ ঘটাচ্ছেন রূপসী নারীদের ইঙ্গিত করে। তার বয়স বিবেচনায় হীন মানসিকতা দেখে আমি স্তম্ভিত! প্রতিবাদ করার সুযোগ না থাকায় সেথা হতে নীরবে চলে আসি। এমনই নিকৃষ্ট অম্ল-মধুর মিশ্রণে চলছে সমাজের মানুষ। ভুল পথে, ভুল কথা, বলে চলছে যথা-তথা! যাই হোক, আমি আগের পর্বে বলেছি, কৈশোর থেকেই লেখা-লেখির প্রবল ইচ্ছে শক্তি ছিল আমার। তাই বিভিন্ন পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে লিখতাম, কখনো ছাপাতো আবার কখনো ছাপাতো না। যখন ছাপাতো তখন আনন্দে বুক ভরে উঠতো। আমার আরেকটি দারুন শখ ছিল, ঈদ এলেই প্রিয়-জনকে ঈদ কার্ডে বা পোস্ট কার্ডে শুভেচ্ছা জানানো। তখন পোস্টকার্ড এর মূল্য ছিল পঁচিশ পয়সা। আর ইনভেলাপ এর মূল্য এক টাকা। তাই পোস্ট অফিসের সনে আমার পরিচয় ও নিবিড় সম্পর্ক কৈশোর থেকেই। একদিন বিকালে, ওল্ড পুলিশ ক্লাব রোডে (স্বদেশি বাজার সংলগ্ন) দিবা-নৈশ পোস্ট অফিস রয়েছে। সেটি আজও বৃদ্ধ ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে শির উঁচু করে। যেহেতু অফিসটি সরকারী, সো রং-টং করা কি অতি জরুরী? চুন রং ছাড়াই বুড়ো কায়ায় ঠাঁয় দাঁড়ানো। তাই ইহাকে বৃদ্ধ বললাম। তো সেথা চিঠি পোস্ট করতে যাই। বিকাল হওয়ার সুবাধে তেমন ভীড় নেই। কাউন্টারের ভেতরে একজন বসে কাজ করছেন। অন্যজন হয়তো পোস্ট মাস্টার হবেন। তিনি ভেতরে একটু দূরে বসে পত্রিকা পড়ায় মগ্ন। কাউন্টারের বাহিরে আমিই একমাত্র তরুণ। পাশেই মুমিনূন্নিসা কলেজের পোশাক পরিহিতা ডাংগর তিন তরুণী। ওরাও চিঠি পোস্টের তরে এসেছে মনে হলো। তো আমি ইনভেলাপে ঠিকানা লিখা শেষ করে এক কর্ণারে আঠা লাগাতে গেলাম। কিন্তু আঠা শুকিয়ে যাওয়াতে মুখের লালা দিয়ে কাজ সমাধা করলাম। উল্লেখ্য সবাই জানেন যে, ইনভেলাপে সুপ্ত-ভাবে আঠা লাগানো থাকে। জলের স্পর্শে তা সতেজ হয়। তো ওরাও আমার দেখাদেখি মুখের লালা দিয়ে খামের মুখটি জোড়া লাগিয়ে কাউন্টারে উপর রেখে হাতের তালু দিয়ে জোরে দুটো চাপ দিলো আর ফিসফিস করে বললো, নে-বাবা দিলাম তোরে ছ্যাপ দিয়া! ওর সঙ্গি অন্য দুই মেয়ে হো হো হো করে হেসে দিল। সেই মেয়েটিও হেসে দিলো। আমি ওর কথা শ্রবণে মুচকি হাসলাম। মাথা নীচু করে অন্যমনস্ক ভাবে, মনে মনে ভাবলাম, ছ্যাপ মানে থুথু, তা ব্যবহারের নানা প্রকার ভেদের কথা!
চলবে--
on test